তাজওয়ার মুনির এর "এক টুকরো গল্প"

এক টুকরো গল্প
তাজওয়ার মুনির


মধ্যরাত। শুনশান নিরবতা। শীতের প্রকোপটাও বেশি। সবাই লেপ কাঁথা গায়ে জড়িয়ে গভীর ঘুমে নিমগ্ন। মাঝে মাঝে ঘুণ পোকার কাঠ কাটার শব্দ পাওয়া যায়। এমন সময় সফিকের মোবাইল টেবিল কাপানো শুরু করলো। ভাইব্রেশন করা ছিল, তাই কোন শব্দ বেরুতে পারলো না। কয়েকবার ফোন আসার পরে ঘুম জড়ানো চোখ ডলতে ডলতে ফোন রিসিভ করলো। "হ্যালো" বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো ঘুমিয়ে পরেছিস? রাত কত! ঘুমাবোনা? বলল সফিক। আচ্ছা ঠিক আছে। দরজাটা খোলা রাখ, আমি আসতেছি। ফোনটা ছিল সফিকের বন্ধু নাফিসের।এত রাতে ও ফোন দিল কেন, আর আমাদের বাড়িতেই বা আসবে কেন, এত শীতের মধ্যে? নিশ্চয়ই কোন বিপদে পড়েছে। কিন্তু কী এমন হলো? মনে মনে ভাবতে লাগলো সফিক।
সফিক আর নাফিস দুই বন্ধু। বাড়ি একই এলাকায়। তবে দুজনের বাড়ির দূরত্ব কম করে হলেও দশ মিনিটের পথ। ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন দুজনের পরিচয়। এর আগেও দেখা সাক্ষাত হয়েছে। কিন্তু ওরকম ভাবে কথা বার্তা হয়নি। ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষার সময় ঘনিষ্ঠ হয় খুব। এর মধ্যে প্রায় মিনিট বিশের মত হয়ে গেল কিন্তু ওর আসার নাম নেই। সফিকের চোখে ঘুমটা আবারো জেঁকে বসলো। কিছুক্ষণ পর দরজায় কড়া নাড়বার শব্দ পাওয়া গেল। কে, নাফিস? বলতেই দরজার ওপাশ থেকে বলল, হ্যা। দরজা খোল। সফিক বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে জিজ্ঞাসা করলো, দোস্ত কী সমস্যা? এত রাতে আমার এখানে? কিছু হয়েছে?
নাফিস বলল, এক জায়াগায় গিয়েছিলাম। আগে হাত মুখটা ধুয়ে আসি, পরে সব বলছি। সফিক "ওকে" বলে বিছানায় চলে গেল। নাফিস ফিরে এসে হাত মুখ মুছে শুতে যাবে এমন সময় সফিক বলল, দোস্ত বললি না কোথায় গিয়েছিলি?
নাফিস বলল, দোস্ত একটু যাত্রা দেখতে গিয়েছিলাম নদীর পাড়। একজনে জোর করে নিয়ে গিয়েছিল। সফিক ঝাড়ি মেরে বলে উঠলো, কী বললি তুই? যাত্রা দেখতে গিয়েছিলি? আমরা সারাদিন মিটিং, সমাবেশ মানববন্ধন করলাম এই অশ্লীল যাত্রা বন্ধ করার জন্য। আর তুই কিনা গিয়েছিলি সেই যাত্রা দেখতে!
ছিঃ নাফিস ছিঃ
বের হ। বের হ, আমার ঘর থেকে। তোর জায়গা নেই এখানে, তুই বন্ধু নামে কলঙ্ক। তোর কারনে এপড়েও সম্মান পাবোনা ওপাড়েও না।
নাফিস মাথা নিচু করে বলল, দোস্ত ভুল হয়ে গিয়েছে। আর কখনো এমন ভুল হবে না। আসলে ঘাড়ে শয়তান চেপেছিল,তাই... সফিক রাগে গজ গজ করে বলল, আমাকে বললে কী হবে? যার নির্দেশ অমান্য করেছিস, সীমালঙ্ঘন করেছিস। তারকাছে মাফ চা। তারপর সফিক বললেন, তিনি চাইলে তোকে মাফ করে দিবেন। তিনি দয়ালু মেহেরবান। তার কাছে চাইলে সবকিছু পাওয়া যায়। শত ভুল করেও, তার কাছে মাফ চাইলে তিনি মাফ করে দেন। তিনি নিজেই বলেছেন, লা তাক্বনাত্বূ মির রাহমাতিল্লাহ (তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না)।
তারপর নাফিস অজু করে আসলো। নামাজ পড়ে আল্লাহ'র কাছে রুনাজারি করতে লাগলো। পরে সেই অশ্লীল যাত্রা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল যাত্রা কমিটি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

নবীন সাদিকের কবিতা " অদ্ভুত আঁধারে"

আব্দুল্লাহ আল মামুন এর কবিতা 'ইচ্ছে করে'