শ্বশুর বাড়ির কুত্তাও সালাম পায় | তাজওয়ার মুনির
আমার কথা হচ্ছে, শুধু জামাই'র উপর কি সালাম দেওয়া ফরজ (তাদের আচরণে ফরজ ই মনে হয়) ?
আরো কিছু লোকজন আছে, যারা সালামের উত্তর নেওয়ার জন্য মুখ হা করে থাকে। এই কাতারে কিছু মৌলানারাও আছে। তাদের ভাবসাব এরকম, মুই কি হনুরে!
ছোটবেলার একটা ঘটনা বলি,
খুব সম্ভবত প্রাথমিকের শেষ পর্যায়ে। মাদ্রাসায় পড়ি। যেহেতু মাদ্রাসায় পড়ি, সচারাচর অন্য ছাত্রদের চেয়ে একটু বেশিই সালাম দেওয়ার অভ্যাস ছিল। একদিন এলাকার বড় ভাই (খুব বেশি বড় না) দুজন মেয়েকে (কাজিন টাজিন হবে আরকি) নিয়ে খোশগল্প করতে করতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। আমিও ঐ রাস্তা দিয়ে বাড়ির দিকে ফিরছিলাম। যেকোনো কারণেই হোক সেদিন তাকে সালাম দেইনি। হয়তো ভুলে গিয়েছিলাম।
পেছন থেকে শুনতে পেলাম, এই শালারপুতেরা দিবো সালাম!
আমি সেদিন তাকে কিছু বলিনি। শুধু সেদিন নয় আজো তাকে কিছু বলিনি। অবশ্য এখন তার সাথে সম্পর্ক খারাপ না।
দৃশ্যতঃ প্রশ্ন আসে, সালাম কি শুধু জামাই শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে বা ছোটরা বড়দের বা সাধারণ জনগণ ঐ ভাবসাব ওয়ালা মৌলানাদের দিবে? নাকি তারাও অন্যান্য লোকজনকে দিবে?
দাড়ান!
আপনি কি বুঝতে পারছেন আমি কী বলছি?
বুঝলে ভালো। আবার ভাইবেন না, আমি সালামের বিপক্ষে। আমি সালাম দেওয়ার পক্ষেই। শুধু মানসিকতাটা একটু উন্নত করলেই হলো।
হাদিস সম্পর্কে যেটুকু জানাশোনা বা পড়াশোনা আছে, তার থেকে বুঝতে পারি, সালাম দেওয়া সুন্নাত।
হ্যা, এটাও বলা আছে, ছোটরা বড়দের সালাম দিবে, পায়ে হাটা ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে সালাম দিবে, কম সংখ্যক লোক বেশি লোককে সালাম দিবে। কিন্তু এই নিয়মটা তো ফরজ করে দিয়ে যাননি।
রাসুল (সাঃ) ছোটদের সালাম দিতেন। এবং তিনি এও বলেছেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম দিবে সে অহংকার থেকে মুক্ত।
যদি আমরা সালাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি তাহলে কী জানতে পারি?
#চলুন একটু জানার চেষ্টা করি।
সালাম ( سلام) একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে শান্তি, প্রশান্তি কল্যাণ, দোয়া, আনন্দ, তৃপ্তি। সালাম একটি সম্মানজনক, অভ্যর্থনামূলক, অভিনন্দনজ্ঞাপক, শান্তিময় উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন পরিপূর্ণ ইসলামী অভিবাদন।
সালামের প্রচলন শুরু মানুষের সৃষ্টিলগ্ন থেকে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসুলুল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন, "আল্লাহ আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করে বলেন, যাও ফেরেশতাদের দলকে সালাম দাও এবং তোমার সালামের কি উত্তর দেয় তা মন দিয়ে শুন। এটিই হবে তোমার আর তোমার সন্তানদের সালাম। সে অনুযায়ী আদম গিয়ে বলেন, 'আস্সালামু আলাইকুম'। ফেরেশতারা উত্তর দেন, 'ওয়ালাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি'। ফেরেশতারা রাহমাতুল্লাহ বৃদ্ধি করেন। এখনও এই ধারা বিরাজমান। সালাম দেওয়া সুন্নত। কিন্তু তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«لا تدخلوا الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا أو لا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم (رواه مسلم.)
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলে দেব, যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? তারপর তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর”।
এখানে বলা হয়েছে, ভালবাসা বৃদ্ধি করার জন্য সালামের প্রসার করতে। পারস্পরিক হৃদ্যতা থেকে সালাম আসে। এখানে জোড় করে সালাম নেওয়ার তো কোন প্রশ্ন আসে না।
জামাই শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে সালাম দেয়না, ছোট পোলাপাইন বড়দের সালাম দেয় না মৌলানাকে সালাম দেয়না। বুঝলাম, তারা অন্যায় করেছে। তা আপনি তাকে কতবার সালাম দিয়েছেন?
আমাদের এখানে শ্বশুর জামাই কে সালাম দিবে বিষয়টা সূর্য পশ্চিমে উদিত হওয়ার মতই কঠিন।
আরে চাচামিয়া, আপনি আপনার জামাইকে দুবার পাঁচবার সালাম দিয়ে দেখেন না, সে আপনাকে সালাম দেয়, নাকি দেয় না। তা না করে ঢোল পিটিয়ে রাস্তায় রাস্তায় বলে বেড়ান কেমন পোলারে বাবা! মুরব্বিদের সালাম ও দেয়না।
বড়ভাই ব্রাদার যারা আছেন, মসজিদের ঈমাম সাহেবরা (কিছু) আপনারা শুধু সালামের উত্তর নেওয়ার জন্য বসে না থেকে সালাম দিলে যারা সালাম দেয়না তারাতো শিখতে পারে।
আসুন, আমরা আগে সালাম দেওয়ার রেওয়াজ চালু করি। এবং পারস্পরিক হৃদ্যতা থেকে অপর ভাইকে সালাম প্রদান করি।
সালাম হোক ভালবাসার নিদর্শন।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
আসসালামু আলাইকুম
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন